মঙ্গলের পরিবেশ পরিবর্তনের কারণ আত্মঘাতী বিক্রিয়া!

লালগ্রহ মঙ্গলের পরিবেশ বদলে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ বের করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম ও স্কটিশ ইউনিভাসির্টিজ এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সেন্টারের মিলিত গবেষণায় বহু দিনের অজানা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া গেছে এবং তা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত বলে ভাবা হচ্ছে।

১৯৩১ সালে আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় খুঁজে পাওয়া যায় একটি পাথরের টুকরো। জ্যোতির্বিদদের অনুমান, এই পাথর পৃথিবীতে এসেছিল মঙ্গল গ্রহ থেকে। বিজ্ঞানীরা পাথরটির রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে বলেন,
অন্তত ১৩০ কোটি বছর আগে এই পাথরের জন্ম। ১ কোটি বছরেরও বেশি আগে মঙ্গলের সঙ্গে কোনও মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষে মঙ্গলের কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়ে মহাকাশে ছিটকে যায়। ‘লাফায়েত’ নামের এই পাথরের টুকরো মঙ্গল থেকে ছিটকে ওঠা অংশেরই একটি টুকরো বলে অনুমান। পাথরের ওই টুকরো কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি তা জানতে গবেষণা শুরু করেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। দেখা যায়, ৮০০ গ্রাম ওজনের ওই পাথরের টুকরোতে সিডেরাইট নামক যৌগের পরিমাণ খুব বেশি।
ভূবিজ্ঞানীরা বলেন, সিডেরাইটের মূল উপাদান অলিভিন নামে এক ধরনের খনিজ। জলীয় বাষ্প, কার্বন ও কার্বনঘটিত যৌগের সঙ্গে অলিভিনের বিক্রিয়া হয়ে সিডেরাইট তৈরি হয়৷ কিন্ত্ত, মঙ্গলের বাতাসে কার্বন খুবই সামান্য, জলীয় বাষ্প নেই বললেই চলে। তা হলে সেখানে কী ভাবে সিডেরাইট তৈরি হল? আর যদিও বা জলীয় বাষ্পের অস্তিত্ব ছিল মঙ্গলে, কোথায় গেল সেই জল? কী করে আজকের এই শুকনো, পাথুরে চেহারা নিয়ে এমন ঠান্ডাহয়ে গেল পৃথিবীর এই পড়শি গ্রহ?
তিন সংস্থার গবেষকরা এই সব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, আজকের পৃথিবীর বাতাসেও কার্বনের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। কিন্ত্ত ৪০০ কোটি বছর আগে এর ঠিক উল্টো ঘটনাই ঘটেছিল মঙ্গলে। সেখানকার বাতাসে সঞ্চিত কার্বন ও জলীয় বাষ্প বিক্রিয়া করতে শুরু করেছিল অলিভিনের সঙ্গে। আনুমানিক ২৭০ কোটি বছর ধরে চলে এই আত্মঘাতী বিক্রিয়া। আজ থেকে ১৩০ কোটি বছর আগে মঙ্গলগ্রহের বাতাসে জমে থাকা কার্বন ও জলীয় বাষ্পের প্রায় সবটাই ফুরিয়ে যায় অলিভিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করতে গিয়ে। গ্রহে সঞ্চিত অলিভিনের অনেকটা অংশ পরিণত হয় সিডেরাইটে। একসময়ে যে গ্রহে প্রাণধারণের উপযুক্ত পরিবেশ ছিল, সেই গ্রহ আজকের প্রাণহীন, শুষ্ক ও ঠান্ডা চেহারা নেয়।

Comments

Popular posts from this blog

How to hide drive in your compute without any software