তিনজন পিতামাতার জিনের সমন্বয়ে হতে যাচ্ছে মানব ক্লোন!

মানব ক্লোনের ব্যাপারে যারা জানেন, তারা নিশ্চয়ই এই ব্যাপারেও অবগত যে কোনও একটি প্রাণীর ক্লোন করার জন্য সাধারণত একটি প্রাণীর শরীর থেকে কোষ সংগ্রহ করা হয় এবং তার সব জেনেটিক বৈশিষ্ট্য ওই প্রাণীটি থেকেই আসে। কিন্তু সম্প্রতি এমন এক প্রক্রিয়ায় ক্লোন করার কথা চিন্তা করা হচ্ছে যে প্রক্রিয়ায় ক্লোন করার জন্য তিনজন ব্যক্তির ডিএনএ ব্যবহার করা হবে। ইংল্যান্ডে এই ধরণের ক্লোনিং সরকারিভাবে অনুমোদনের পরিকল্পনাও চলছে।

এই পদ্ধতিতে ক্লোনিং হল এক ধরণের in vitro fertilization (IVF) অর্থাৎ ল্যাবরেটরিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নিষেক ঘটানো। এর নাম দেওয়া হয়েছে mitochondrial replacement। মানব কোষের একটি অঙ্গাণু হল মাইটোকন্ড্রিয়া এবং এর কিছু জটিলতার কারণে কিছু নারী সন্তানধারণ করতে অক্ষম। এই ধরণের ক্লোনিং এর ফলে তারা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন। এভাবে তিনজন মানুষের শরীর থেকে ডিএনএ নেবার ফলে ক্লোন করা এই শিশুকে বলা যাবে “জেনেটিকভাবে উন্নত”, তার মায়ের এই মাইটোকন্ড্রিয়ার সমস্যায় সে ভুগবে না।

কিছু সংখ্যক ব্যক্তি অবশ্য এই সংবাদে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই পদ্ধতিতে মানব ক্লোন করার জন্য যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা এ পর্যন্ত শুধুমাত্র ল্যাবরেটরিতে প্রয়োগ করা হয়েছে, তাই মানুষের ওপরে প্রয়োগের জন্য এটা যথেষ্ট নিরাপদ কি না তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। শুধু তাই নয়, ধারণা করা হচ্ছে এ থেকেই সুত্রপাত হবে ডিজাইন করে শিশু তৈরি এবং মানুষের জেনেটিক নকশায় যথেচ্ছ পরিবর্তন আনা।

এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা প্রয়োজন আজ থেকে ৩৫ বছর আগে যখন সাধারণ IVF পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা শুরু হয় তখনও এ নিয়ে ছিল যথেষ্ট বিতর্ক। ল্যাবরেটরিতে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলন ঘটানোর এই পদ্ধতির কিছু ঝুঁকি দেখা যায়।

যেমন এ থেকে জন্ম নেওয়া শিশু হতে পারে অপরিপক্ক এবং অতিরিক্ত কম ওজন হতে পারে তার। এছাড়াও এভাবে এমন অনেক ভ্রূণ তৈরি হতে পারে যেগুলো হয়তো কখনো শিশু জন্মদানে ব্যবহারই করা হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে এই প্রক্রিয়ায় বহু সংখ্যক দম্পতি সন্তান লাভে সক্ষম হয়েছেন যারা স্বাভাবিকভাবে তা করতে পারতেন না। বর্তমানে এই পদ্ধতি অনেকটাই প্রচলিত হয়ে এসেছে। IVF এর এই নতুন পদ্ধতি, Mitochondrial replacement আগের পদ্ধতির চাইতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আর তাছাড়া মাইটোকন্ড্রিয়া সংক্রান্ত এই অসুস্থতা পাঁচ হাজারে মাত্র একজন মানুষকে আক্রান্ত করে, সুতরাং এর ব্যবহারও খুব বেশি হবে না। যদি এর ব্যবহার অনুমোদন করা হয় তবে এমন অসুস্থতায় আক্রান্ত অনেক নারী সন্তান ধারণে সক্ষম হবেন এমনকি তাদের সন্তানের মাঝে এই রোগ বাহিত হবে না।

তিনজন মানুষের থেকে নেওয়া ডিএনএ ব্যবহার করে সন্তান জন্মদানের এই পদ্ধতি কিভাবে কাজ করে? পিতা এবং মাতা অর্থাৎ দুইজন মানুষের জিনের সমন্বয়ে প্রাকৃতিকভাবে যে শিশু জন্ম নেয় তার সাথে এই পদ্ধতিতে জন্ম নেওয়া শিশুর বাহ্যিক কোনও পার্থক্য থাকবে না। আমাদের দেহকোষের নিউক্লিয়াসে যে ডিএনএ থাকে তার অর্ধেক জিন আসে আমাদের মায়ের থেকে এবং বাকি অর্ধেক আসে আমাদের বাবার থেকে। এই জিন কিন্তু এটা ছাড়াও আরেকটা জিন আছে, আর সেটা থাকে আমাদের কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায়।

আমাদের খাদ্য থেকে শক্তি তৈরি করে এই মাইটোকন্ড্রিয়াই এবং এদের প্রতিটির মাঝে একটি করে ডিএনএ থাকে যা ধারণ করে প্রায় ৩৭ টি জিন। আমাদের বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ওপরে এই জিনের কোনও প্রভাব থাকে না। আর এদের আরেকটি বিরাট বৈশিষ্ট্য হল, এরা আসে সম্পূর্ণ মায়ের থেকে। মায়ের এই মাইটোকন্ড্রিয়া জিনে যদি অনেক বেশি মিউটেশন থাকে তাহলে তা থেকে অনেক জটিলতার উৎপত্তি হতে পারে যার মাঝে রয়েছে পেশীর দুর্বলতা, হৃদরোগ এবং খিঁচুনি। এমনকি এগুলো প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে অনেক সময়ে। তাই এই নতুন উপায়ে যা করা হয় তা হল, মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ার এই অসুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়ার বদলে সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া ব্যবহার করা হয়। সুস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া আছে এমন একজন নারীর কোষে ওই মাইটোকন্ড্রিয়া রেখে দিয়ে তা থেকে নিউক্লিয়াসের ডিএনএ বের করে নেওয়া হয়। এরপর মাইটোকন্ড্রিয়ায় সমস্যা আছে এমন মা এবং বাবার নিউক্লীয় ডিএনএ যোগ করা হয় ওই কোষের ভেতরে। হ্যাঁ, এই পদ্ধতিতে যে শিশু জন্ম নেবে তার থাকবে তিনজন পিতামাতা কিন্তু একটা মারাত্মক অসুস্থতার থেকে বেঁচে যাবে সে। তাই এই পদ্ধতির অনেক সমালোচনা থাকলেও আসলে মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করে তুলতে পারবে এটি।


LIke FB>>>

Comments

Popular posts from this blog

How to hide drive in your compute without any software